বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম কর্মজীবন শুরু হয় একটি বিমা কোম্পানিতে চাকরির মাধ্যমে। এজন্য এই খাতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘বাবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, গাড়ি পেয়েছেন, আমরাও বেশ ভালোভাবে আছি, এই সময়টা বাবা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের একটা আত্মার যোগাযোগ আছে।’
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। সেই সময় তিনি মাসে বেতন পেতেন প্রায় দুই হাজার টাকা। জিন্নাহ এভিনিউয়ে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) ভাম এন্ড কোম্পানির পাশের বিল্ডিংয়ের দোতলায় ছিল আলফা ইন্স্যুরেন্সের অফিস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন-জীবিকার জন্য আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দায়িত্ব নেন। সেই কোম্পানির মালিক আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। তিনি তাকে দায়িত্ব নিতে বলেন। সে কারণে তিনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করতেন। তবে এটা বেশি দিন টেকেনি। কারণ ১৯৬২ সালে আবার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়।
বাবার ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করার সময়টা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ, বাবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, গাড়ি পেয়েছেন, আমরাও বেশ ভালোভাবে আছি, এই সময়টা বাবা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের একটা আত্মার যোগাযোগ আছে।
মার্চ মাস আমাদের সংগ্রামের মাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর ওপর আইয়ুব খানের সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছিল। তিনি চাইলেই যেকোনো স্থানে যেতে পারতেন না। তবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় যেতেন। এর মাধ্যমে মানুষকে সংগঠিত করেন মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে। এতে স্বাধীনতা আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়। এজন্য বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একটা যোগসূত্রতা আছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
ছয় দফা প্রণয়ন সর্ম্পকে শেখ হাসিনা বলেন, ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন বাবা। পুরো জিনিসটা টাইপ করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। পরে এটা একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে ট্রান্সলেশন করা হয়। আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জন বা ছয় দফা প্রণয়ন, ছয় দফার ভিত্তিতে ৭০ এর নির্বাচন- সবই কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই করা হয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের এক যোগসূত্র রয়ে গেছে, এটা বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিমা নিয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এর সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানোর তাগিদ দেন। বিমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতেও বলেন। যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে টাকা না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, কারও চাপে মাথা নত করবেন না, সেটা মন্ত্রী-এমপি যিনিই হোক না কেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার বিমা আইন যুগোপযোগী করেছে। এছাড়া এই খাতকে ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
বিমা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগীতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।