সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের যে অধিকার আছে সেটা নির্দিষ্ট করার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে আইন প্রণয়ন করে। তখনও জাতিসংঘে এই আইন হয়নি। জাতিসংঘে এই আইন হয়েছে ১৯৮২ সালে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই এই আইন প্রথম পাস করে।
তিনি বলেন, আমাদের যেমন সমুদ্র আছে তেমন বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে। এই অঞ্চলের সব ধরনের নিরাপত্তা বিধান করা, সব সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগানো একান্ত অপরিহার্য। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে এদেশে আমাদের যে অধিকার আছে তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ১৯৭৫ সালের পরে যারা অবৈধভাবে সরকার গ্রহণ করেছিল তারা কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমি জানি না, তাদের এই ব্যাপারে সম্মুক ধারণা ছিল কি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্যোগের ফলে ১৯৯৬ সালে কিছু কাজ করে যাই, দ্বিতীয় দফা সরকারে আসার পর থেকে আমরা আবার উদ্যোগ নেই এবং সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার তা নিশ্চিত করি। এক দিকে মিয়ানমার, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক রেখেও আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
কোস্ট গার্ডের কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোস্ট গার্ড দেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জানমাল রক্ষা, চোরাচালান, মাদক ও মানবপাচার দমনের পাশাপাশি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে কোস্ট গার্ড মানুষের মাঝে নিরাপত্তা ও আস্থার বিশ্বস্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব। আমি চাই আমাদের কোস্টগার্ড আধুনিক, প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন, উন্নত, শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠুক। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণ, যাত্রী পরিবহন সকলের নিরাপত্তা বিধানে আপনারা বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছেন। আপনাদের দায়িত্বপালনে বাংলাদেশের জনগণই সব থেকে লাভবান হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালছি। দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। ভূমিহীন মানুষদের আমরা বিনামূল্যে ২ কাঠা জমি ও ঘর তৈরি করে জীবন জীবিকার সুযোগ করে দিচ্ছি। নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকের জীবন যেন উন্নত সমৃদ্ধশালী হয়, প্রত্যেকের সন্তান লেখাপড়া শিখবে, আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতি শিখবে, তারা নিজেরা উপার্জন করবে, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। আমাদের জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামরিক ও অসামরিক অতিথিরা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোস্ট গার্ডের নবনির্মিত স্টেশন লক্ষীপুরের দুটি ভবন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা, নাবিক এবং অসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য কোস্ট গার্ড পদক, প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড পদক, কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক ও প্রেসিডেন্ট কোস্ট গার্ড (সেবা) নামে চার ক্যাটাগরিতে পদক পরিয়ে দেন।
কোস্ট গার্ড প্রেসিডেন্ট পদক (পিসিজিএম) পেলেন যারা- কমান্ডার মোহাম্মদ মেসবাউল ইসলাম, কমান্ডার মো. জিয়াউল হক, লে. কমান্ডার মো. মামুনুর রহমান মুন, লে. মো. সাদিক হোসেন, লে. মো. নাজমুল ইসলাম, ফারুক আহম্মেদ, মো. হুমায়ুন খান, মো. আবদুল হাকিম, শুভজিৎ দাস ও শাহাজুল ইসলাম।
কোস্ট গার্ড পদক-সেবা (বিসিজিএমএস) পেলেন যারা- কমোডর মো. এনামুল হক, ক্যাপ্টেন মো. শহীদুল্লাহ আল ফারুক, কমান্ডার মুহাম্মদ নাজমুল হক, কমান্ডার এস এম নূর-ই-আলম, কমান্ডার এম সেলিম আখতার, মো. ওসমান গণি, মো. আল মামুন, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. ইলিয়াস রেজা খান ও এম শমসের আলী।
কোস্ট গার্ড প্রেসিডেন্ট পদক-সেবা (পিসিজিএমএস) পেলেন যারা- কমান্ডার মো. আবু বকর, কমান্ডার রিয়াজ শহীদ, সার্জন লে. কমান্ডার মো. ইমরান জুয়েল, মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, শাকিল আহমেদ, মো. রফিকুল আলম, এম নজরুল ইসলাম, মো. আবু এমরান সুজন, জিয়াউর রহমান ও মো. আবদুর রহিম মোল্লা।