a
});আনিকার ভাষায়, ছোট থেকেই আমার স্বপ্টম্ন ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিছু একটা করা। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরিচিত একজনের পরামর্শ নিয়ে এখানে সেলাই কাজ শিখছি। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ের কৌশলও।আনিকা রহমানের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকলেও দারিদ্র্যের কশাঘাতে তা একসময় বিলীন হয়ে যায়। মাত্র ১২ বছরেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। স্কুলের পড়াশোনা বন্ধ হলেও অনিকার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সব বাধা পেরিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেলাই কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।সিলেটে ইউসেপ বাংলাদেশের একটি কেন্দ্রে আনিকার সঙ্গে সেলাইয়ের কাজ শিখছেন আরও ৩৯ জন। এ ছাড়া অন্যান্য কাজও শিখছেন অনেকে। সবার লক্ষ্য দক্ষ ও আত্মনির্ভরশীল হওয়া।সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, কেউ সেলাইয়ের কাজ শিখছেন, কেউ শিখছেন ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির কাজ। কেউ অটোমোবাইল সার্ভিসিং বা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখছেন। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। মনোযোগ সহকারে সবাই নিজের কাজে নিয়োজিত। কিন্তু তাঁরা সবাই বেকার-কর্মসংস্থানহীন। সবার লক্ষ্য নিজ কাজে দক্ষ হয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। তাঁদের এ প্রশিক্ষণে আর্থিক সহযোগিতা করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কয়েকটি শিফটে ভাগ করে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের। মহামারি করোনায় চাকরিচ্যুত কর্মহীনদের জন্য প্রশিক্ষণের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলে প্রথম ধাপে ৩০০ জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে খুলনা অঞ্চলে ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে এসব এলাকায় আরও ৮০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এলাকায় ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।সিলেটের খাদিমনগর এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইউসেপের যৌথ উদ্যোগে চালু হওয়া কর্মমুখী প্রশিক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু নারী-পুরুষ সানটেক এনার্জি লিমিটেড নামে একটি ব্যাটারি তৈরির কারখানায় কাজ করছেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এসব শ্রমিকের বেতন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। সানটেক এনার্জির শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘করোনার আগে আমি অন্য একটি কোম্পানিতে কাজ করতাম। করোনার মধ্যে হঠাৎ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। গত জুনে খবর পেয়ে ইউসেপের একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হই। সেই কোর্স শেষে করার পর আবারও চাকরির সুযোগ পেয়েছি।’ইউসেপের সিলেট অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাইয়ুম মোল্লা সমকালকে বলেন, যেসব কারিগরি কাজ শিখলে নিশ্চিত চাকরি হয়, সেগুলোর ওপরই আমরা প্রশিক্ষণ দিই। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দক্ষতা ও চাকরির নিশ্চয়তা বাড়ে।’স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে অভাবী মানুষদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিবর্তে এ ধরনের প্রকল্পে যুক্ত করতে আমরা বেশি আগ্রহী। এর ফলে মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজের কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, যা সারাজীবন কাজে লাগে।’