a
});কয়েক দফা দাম বাড়ানোর পরও বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি ও আটার সংকট এখনও কাটেনি। কোনো কোম্পানি চিনি দিচ্ছে তো ভোজ্যতেল দিচ্ছে না। কেউ তেল দিলেও আটা সরবরাহ করছে না। এ কারণে বাজারে প্রয়োজনীয় এ তিন পণ্যের কিছুটা টান পড়েছে। তবে পাড়া-মহল্লায় এ সংকট খানিকটা বেশি। আবার কিছু জায়গায় এসব পণ্য পাওয়া গেলেও ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চিনির সংকট চলছে প্রায় দেড় মাস। এরপর যুক্ত হয়েছে আটার ঘাটতি। এক সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে লুকোচুরি। কোম্পানিগুলোর ডিলাররা চাহিদাপত্র নিয়েও পণ্য দিতে করছেন গড়িমসি। কোনো কোনো ডিলার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার গতকাল ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এখন কোম্পানিগুলো হয়তো বাজারে এ দুই পণ্যের সরবরাহ বাড়াবে।নিত্যপণ্যের বাজারে নতুন কোনো শুভবার্তা নেই, আছে দুঃসংবাদ। ভোজ্যতেল আর চিনির দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি ১৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১০৮ টাকা। গরিবের ওএমএসের আটাতেও পড়েছে দামের থাবা। ৬ টাকা বেড়ে এখন এক কেজি আটা কিনতে খেটে খাওয়া মানুষকে গুনতে হবে ২৪ টাকা। এর আগে গত রোববার বাজারের আটার দামও কেজিতে বেড়েছিল ৬ থেকে ৭ টাকা। ফলে নিত্যপণ্যের দামের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা মানুষ আরও দুর্বিপাকে পড়ল। আর কোম্পানিগুলো বলছে- রাতারাতি এত গ্যাস গেল কই? এলএনজি আমদানি হচ্ছে না। এ কারণে গ্যাসের সংকট। ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ মাত্র এক বছরে ৩৪ বিলিয়নে নেমেছে। ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতিও ভালো নয়। রপ্তানি আয় কমছে। রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এসবই অর্থনীতিকে ফেলেছে চাপে। অর্থনীতি মূলত বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে বেসরকারি খাত ধুঁকছে ডলার, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে। আমদানি থিতু হওয়ার কারণে উৎপাদন কমেছে। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের বাজারে। তাঁরা বলছেন, এলসিই মূল সমস্যা। আগে ব্যাংকগুলো এলসি নেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোর পেছনে ঘুরত, এখন কোম্পানিগুলো ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এলসি খোলার আগে কী পণ্য ও কত দামে আমদানি হবে এবং সেগুলোর স্থানীয় বিক্রয়মূল্য কত হবে- বিস্তারিত জানার পর ব্যাংকগুলো মনে করে আমদানিকারকের অর্থ পরিশোধে সংকটে পড়তে পারে, এ কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এলসি খোলার ব্যাপারে পিছু হটে।
নানামুখী সংকট :সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংক সংকটে আছে, মানুষের আমানত খোয়া যেতে পারে, দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে- এমন সব গুজবে সবার মনে আতঙ্ক ভর করেছে। এখন আমদানি করলে যদি অর্থ পরিশোধের সময় ডলারের দাম আরও বেড়ে যায় তখন লোকসান গুনতে হবে। এসব কারণে কমছে আমদানি। আগে যাঁরা ৫০ হাজার টন পণ্য আমদানি করতেন এখন করছেন ৩০ হাজার টন।
এছাড়া গ্যাসের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। দুই মাস ধরে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। গ্যাসের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে কারখানায় পণ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কারখানার খরচও বাড়ছে। একদিকে আমদানি কমছে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমেছে। যেহেতু ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আগেই বেড়েছে আটার দাম। তাই অল্প সময়ের মধ্যে এ তিন খাদ্যপণ্যের সরবরাহ সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছে কয়েকটি ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী কোম্পানি।
জানা গেছে, গত তিন-চার মাসে আটার দাম বেড়েছে পাঁচ দফা। আগস্টের শুরুতে প্যাকেটজাত আটার কেজি ছিল ৫১ থেকে ৫২ টাকা; এরপর ওই মাসের মাঝামাঝিতে হয় ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। অক্টোবরে এসে দাঁড়ায় ৬২ থেকে ৬৩ টাকা। নভেম্বরের শুরুতে আটার কেজি ছিল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। পাঁচ দিন আগে দাম আরেক দফা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭১ টাকায়। তবে প্যাকেটজাত আটার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা কমে মিলছে খোলা আটা।
গত দুই মাসে তিন দফা বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৯৫ নির্ধারণ করে সরকার। এরপরও সংকট তৈরি হয় পণ্যটির। এখন সরকার আরেক দফা দাম বাড়িয়ে কেজি ১০৮ টাকা করেছে।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা গত ১ নভেম্বর সয়াবিন তেলের লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই তেলের সংকট শুরু হয়। কিছু জায়গায় খোলা সয়াবিন মিলছে, তবে লিটারে গুনতে হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা। বোতলজাত তেলের সরবরাহ খুব কম দেখা গেছে। তবে গতকাল তেলের নতুন দাম নির্ধারণ হওয়ায় সরবরাহ আবার বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।কী বলছেন খুচরা বিক্রেতারা :জানতে চাইলে নিউমার্কেটের জনপ্রিয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, ‘দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চিনি, আটা ও তেলের ঘাটতি চলছে। হয়তো কোম্পানিগুলো দাম বাড়াবে, সেকারণে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। দাম বাড়িয়ে হলেও পণ্য দেওয়া উচিত। কারণ ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে সাধারণত পরিচিত ক্রেতারা আসে। তাদের চাহিদামতো পণ্য দিতে না পারলে ক্রেতা ছুটে যায়। যেখানে পাবে সেখানে চলে যাবে। এতে ব্যবসার ক্ষতি হয়। হাতিরপুল কাঁচাবাজারের জাকির জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে চিনির সংকট। আটা আর তেলের সংকট প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। তবে এখন নন-ব্র্যান্ডের কিছু আটা আসছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ফারাজি স্টোরের স্বত্বাধিকারী বিকাশ বণিক বলেন, চাহিদা নেওয়ার পর কোনো কোম্পানি দিচ্ছে, আবার কোনো কোম্পানি দিচ্ছে না। এ কারণে কিছুটা ঘাটতি আছে।