a
});কপ-২৭ নামে পরিচিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে বিশ্বের বহু রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ হাজার হাজার নেতা নীতি আলোচনায় অংশ নেবেন। জলবায়ু পরিবর্তন কর্মীরা সম্মেলনে বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রধান কার্বন নিঃসরণকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম বিপন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশ অভিযোজনের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের জন্য ধনী দেশগুলোকে চাপ দেবে। তবে সম্মেলনে কতটুকু সাফল্য আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত ধরিত্রীকে রক্ষায় মিসরের বিলাসবহুল রিসোর্ট শহর শার্ম আল-শেখে আজ রোববার শুরু হচ্ছে দুই সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেড মাত্রার নিচে রাখার অঙ্গীকার করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। তবে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের পরিকল্পনা এখনও অপর্যাপ্ত। পরিবেশবাদী নেতারা উন্নত দেশগুলোকে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে বলছেন। এ সম্মেলনে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার লোক অংশ নেবেন, যার মধ্যে ২৪ হাজার কূটনীতিক এবং ১৩ হাজার পর্যবেক্ষক। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান লোহিত সাগরের তীরের এই রিসোর্ট ভ্রমণ করবেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও রয়েছেন। তবে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম কার্বন নির্গমনকারী চীন এবং ভারত নিম্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাবে। চীন মোট বৈশ্বিক নির্গমনের প্রায় ২৭ শতাংশ এর জন্য দায়ী।
বাংলাদেশের অবস্থান: বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে হাজির হয়েছে। তবে গতবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ-২৬-এ অংশ নিলেও এবার মিসর যাচ্ছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের এজেন্ডা নিয়ে হাজির হবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য বর্ধিত তহবিলের গুরুত্বও তুলে ধরবে।
২০২৫ সাল পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তির আওতায় প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার যে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে, এবারের সম্মেলনে তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হবে ঢাকার পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের পর এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর অবস্থান কী হবে, সেটি আলোচনায় রাখতে চায় ঢাকা।
এর বাইরে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ (জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ক্ষয়ক্ষতি) ইস্যু নিয়ে কথা বলবে ঢাকা। ঢাকার চাওয়া হচ্ছে, ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাইরে লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য আলাদা অর্থায়ন করতে হবে। এ ইস্যুর সঙ্গে সম্পৃক্ত তথা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যাসহ নানাবিধ কারণে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব আন্তর্জাতিকভাবে দেখতে হবে। এছাড়া অভিযোজন ও প্রশমন, সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তরে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হবে।
ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক বলেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের জন্যও মোটা অঙ্কের অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ বছর জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উচিত হবে, প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদেয় অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহে রোডম্যাপ ঘোষণায় উন্নত দেশগুলোকে রাজি করানো।