গতকাল বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল জ্বালানি খাত নিয়ে আলোচনা করেছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।এলএনজি-তেল আমদানি প্রক্রিয়া, এ খাতে ভর্তুকি, গ্রাহক পর্যায়ে দাম ও লাভ-লোকসানের খোঁজখবর নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ভর্তুকিনির্ভরতা ও লোকসান কমাতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণের কথা বলেছে তারা।
অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে সম্প্র্রতি আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এই সহায়তা চাওয়ার পর আইএমএফ বিভিন্ন খাতের বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমিয়ে আনার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন একটি দল ঢাকা সফর করছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বৈঠক করে। গতকাল ছিল জ্বালানি খাতের সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত জ্বালানি বিভাগের বৈঠকে এর সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর পর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধি দল। বিকেলে বিপিসির বৈঠকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ নেতৃত্ব দেন।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৬১ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলছে ৩৮ কোটি ঘনফুট। কয়েক মাস আগেও এলএনজি থেকে পেট্রোবাংলা ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিত। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় আমদানি কমেছে। লোকসান কমাতে গত জুনেই গ্যাসের দাম ২২.৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর পরও এলএনজির খরচ মেটাতে পেট্রোবাংলা সরকারের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে।
বিপিসির সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ আর্থিক সক্ষমতা ও লাভ-ক্ষতির পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। বিপিসি জানায়, বিশ্ববাজারের চেয়ে কম দামে দেশে তেল বিক্রি করে। এতে লোকসান হচ্ছে। তবে তারা এখন সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয় না। গত কয়েক বছরের লাভ ও নিজস্ব উন্নয়ন খাতের অর্থে এখনও আমদানি খরচ শোধ করছে। বিশ্ববাজারে দাম না কমলে বেশিদিন চলা সম্ভব নয় বলে প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়। বিপিসির হিসাব পদ্ধতিকে আরও স্বচ্ছ করার পরামর্শ দেয় আইএমএফ। বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়েও বিপিসিকে পরামর্শ দেওয়া হয়। বিপিসি বলেছে, বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। প্রতিনিধি দলের প্রশ্নের উত্তরে বিপিসি জানিয়েছে, ভ্যাট-ট্যাক্সের বাইরেও লভ্যাংশ থেকে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেওয়া হয়।
২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত সাত অর্থবছরে ভ্যাট-ট্যাক্স বাদেই ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছিল বিপিসি। সেখান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমাও দেয় সংস্থাটি।