ব্যাংক খাতে ব্র্যাক ব্যাংক ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি বলে বিবেচিত। কিন্তু গেল সপ্তাহের ৫ হাজার ৮০১ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে এ ব্যাংকের লেনদেন হওয়া শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল মাত্র ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা মোটের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ২৮ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে বিএটি বাংলাদেশের কেনাবেচা হওয়া শেয়ারের মূল্য ছিল ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা মোটের শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশেরও কম। অথচ এ সপ্তাহে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের মতো স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের প্রায় ২১৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মোটের পৌনে ৪ শতাংশ।মৌলভিত্তির দিক বিবেচনায় দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে ভালো শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগেও আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। এসব কোম্পানির অধিকাংশই প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বেঞ্চমার্ক সূচক ডিএস-৩০ এর অধীন। কিন্তু এ সূচকে থাকা ৩০ শেয়ারের মধ্যে দুই থেকে তিনটি বাদে বাকিগুলোর লেনদেন একেবারেই তলানিতে, যা শতাংশের হিসাবে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌলভিত্তি বিবেচনায় এ বাজারের কেউ শেয়ার কেনাবেচা করেন না। সবাই জুয়ার শেয়ারের পেছনে ছুটছে। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত দুই-তৃতীয়াংশ কোম্পানির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে। দর হারানোর ভয় না থাকার পরও এসব শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহ নেই কারও। ফলে নির্দিষ্ট দিনে ফ্লোর প্রাইসে থাকা এসব শেয়ারের কেনাবেচাও মোট লেনদেনের ৩ থেকে ৮ শতাংশে ওঠানামা করেছে। ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে আটকা পড়া কোম্পানির মধ্যে গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসহ এ বাজারের স্বনামধন্য কিছু কোম্পানিও রয়েছে।
চলতি সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে সর্বমোট ৫ হাজার ৮০১ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৬০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার। তালিকাভুক্ত ৩৮৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে শেয়ার ছিল ২৪৫টি। তবে গত বুধবার এ সংখ্যা ছিল ২৪৮টি। এভাবে প্রতিদিনের হিসাবে এ সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা শেয়ারগুলোর ৩৪০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা মোটের মাত্র ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত শেয়ারগুলোর বড় অংশই দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে ভালো শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে আছে বেক্সিমকো ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বিএসআরএম লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, রেনাটা লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড, সিঙ্গার বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের মতো শেয়ার।
তবে বেক্সিমকো ফার্মা ছাড়া বাকি শেয়ারগুলো লেনদেনের একেবারে তলানিতে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএস-৩০ ভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট ১ হাজার ১৬৬ কোটির টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডেরই ৪৫৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা ডিএসইর পুরো সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ডিএস-৩০ এর মোট লেনদেনের প্রায় ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৩৫৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৬ শতাংশ এবং ডিএস-৩০ এর ৩০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ বেক্সিমকো এবং ওরিয়ন ফার্মার লেনদেনই এসব শেয়ারের মোট লেনদেনের ৬৯ শতাংশের বেশি। অথচ সপ্তাহজুড়ে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয় সাড়ে ১১ কোটি টাকারও কম, যা মোটের শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গ্রামীণফোনের লেনদেন শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ সমকালকে বলেন, এ বাজার পুরো জুয়ার বাজারে পরিণত হয়েছে। জুয়াড়িরা যেসব শেয়ারে আছে, সেগুলোরই দর এবং লেনদেন হচ্ছে। দিনে গড়ে হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু এ লেনদেনে ১০ থেকে ২০টা শেয়ারই সব। গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, স্কয়ার ফার্মার শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকলেও কেউ কিনছে না। এটা অসুস্থ বাজার ছাড়া আর কিছুই নয়।