ভারতের এই পদক্ষেপে আবারও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে পাট খাতের উদ্যোক্তা রপ্তানিকারকদের মধ্যে। ডিজিটিআরের সুপারিশ, দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের আগেই এ প্রক্রিয়া বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছে তারা। ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সন্তোষজনক সাড়া না পেলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) নালিশ করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।বাংলাদেশি পাট পণ্যে নতুন মেয়াদে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে ভারত। গত কয়েক মাস ধরে সানসেট রিভিউয়ের (পর্যালোচনা) পর আরও পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্কের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রেমিডিস (ডিজিটিআর)। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এই সুপারিশ গত সোমবার ডিজিটিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে এই শুল্কের নতুন মেয়াদ।উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ আমলেও নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ মুহূর্তে করণীয় কী, কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ, ভারতের ডিজিটিআরের সুপারিশ ডব্লিউটিওর বিধিবিরোধী কিনা, সহজ কী প্রতিকার আছে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য সংশ্নিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে দ্রুততম সময়ে একটি বৈঠক ডাকার জন্য ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোন পাটকলে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক্ক কত আরোপ করা হচ্ছে আইনজীবীর মাধ্যমে তা জেনে নিতে পাটকলগুলোকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পাটকল কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় ভারতীয় উদ্যোগের কী কী অসংগতি আছে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আকারে অবহিত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে গত বুধবার অনুষ্ঠিত এক সভায়।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভায় জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ), জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) ও জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিইএ) প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. আতিকুল হক, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান প্রমুখ।
উৎপাদন মূল্যের তুলনায় কম দামে বাংলাদেশের পাটপণ্য ভারতে রপ্তানি হচ্ছে- ভারতীয় উৎপাদনকারীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। বাংলাদেশ থেকে প্রতি টন পাটপণ্য আমদানিতে ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হলেও শুল্ক প্রত্যাহার হয়নি। মেয়াদ বাড়ানোর অংশ হিসেবে ডিজিটিআর গেজেট প্রকাশ করেছে। এর আগে ‘সানসেট রিভিউ নোটিফিকেশন’ বা চূড়ান্ত পর্যালোচনা নোটিশ জারি করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গত জুন মাসে ঢাকায় এসে ভারতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
বিজেএমএর মহাসচিব আব্দুল বারিক খান সমকালকে বলেন, অন্যায়ভাবে অ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করেছে ভারত। ডব্লিউটিওর নিয়ম হলো, যে দেশের পণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ হবে, সে দেশকে তথ্যপ্রমাণসহ এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে হয়। কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা না দিয়েই অন্যায়ভাবে এ শুল্ক্ক আরোপ করে রেখেছে। এতে এ দেশের পাট খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিজিটিআরের সুপারিশ ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদনের আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে পাট খাত আরও বিপদে পড়ে যাবে।
বাংলাদেশের পাটপণ্যের রপ্তানির অন্তত ৬০ শতাংশ যায় ভারতে। অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় অনেক মিল উৎপাদন কমিয়ে এনেছে। টিকতে না পেরে কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।