শুধু তহুরা নন, মরণোত্তর চক্ষুদানের ব্যাপারে দেশে অনেকেই এখন আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণরা এগিয়ে আসছেন। কেউ কেউ মরণোত্তর দেহদানেরও অঙ্গীকার করছেন। দেশে অন্ধত্ব মোচন নিয়ে কাজ করা সামাজিক সংগঠন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির তথ্যমতে, গত ৩৬ বছরে দেশের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন। তহুরা বেগম চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্বেচ্ছায় বছর চারেক আগে মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, মৃত্যুর পর তাঁর চোখ তো আর কোনো কাজে আসবে না। দান করলে আরেকজনের উপকার হবে। কেউ তাঁর জন্য চোখে দেখতে পারবে। মানবিক চিন্তা থেকেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালন করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। চোখের যত্ন নিতে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরি, চক্ষুরোগ নির্মূলে প্রভাবিত করা, চোখের যত্ন নেওয়ার তথ্য জনগণের কাছাকাছি আনাই বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের লক্ষ্য। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আপনার চোখকে ভালোবাসুন’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রায় চার কোটি মানুষ নিবারণযোগ্য চোখের জটিলতার শিকার। দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১২ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে একটি শিশুও। বাংলাদেশে ৭৫ লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আছেন। তাঁদের মধ্যে শিশু প্রায় ৫০ হাজার।
দেশে অন্ধত্ব মোচনে কাজ করা সংগঠন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতি সূত্র জানায়, ৩৬ বছরে তারা চার হাজার ৫৭টি কর্নিয়া পেয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৫০০টি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার জমা পড়েছে ৪২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে অনলাইনে।
চিকিৎসকরা জানান, মরণোত্তর চক্ষুদানের মাধ্যমে অন্য চোখে আলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে এখনও মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়। এ ছাড়া কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই চক্ষু প্রতিস্থাপন করতে হয়। তবে যাঁরা অঙ্গীকার করছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। অনেক অঙ্গীকারকারীর পরিবার তাঁর মৃত্যু সংবাদ গোপন রাখে। এ বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সমকালকে বলেন, কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের শিকার মানুষকে নিয়ে কাজ করে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি। যাঁরা মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন, তাঁদের চোখ সংগ্রহ করে সন্ধানী আই ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, এখনও বিষয়টি নিয়ে মানুষ সচেতন নয়। সবাইকে বিষয়টি জানানো উচিত। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে।