কাক ডাকা ভোর থেকেই ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয় কেবি বাজারে। ফজরের নামাজ শেষে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম এই মৎস্য আড়ত। অন্যান্য সময়ের থেকে খুচরো ক্রেতাদের যেমন ভিড় ছিল, তেমনি মাছের দাম ছিল অনেক বেশি। প্রতি কেজি মাছ অন্যান্য দিনের তুলনায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। ১ কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের মাছ ১৫ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মাছ ১২০০ টাকায়, ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে। এছাড়া আধা কেজির নিচের মাছ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। সবশেষ ২০০ গ্রাম ও তার নিচের মাছ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। যা অন্যান্য সময় বিক্রি হত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে।ট্রলার মালিক বলেন, কাল থেকে সাগরে অবরোধ শুরু। এবার তেমন মাছও পাইনি। যা পাইছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রির পরেও ঠিকঠাক খরচ উঠবে কিনা বলা যাচ্ছে না।শুধু ইলিশ নয়, অন্যান্য মাছের দামও ছিল সাধারণ ক্রেতাদের বাজেটের থেকে বেশি। ঢেলা চেলা, চাপিলা, তুলার ডাটি, রূপচাঁদা, কঙ্কন, মেদ, মোচন গাগড়া, সাগরের বাইলা, লইট্টাসহ সব ধরনের মাছ বিক্রি হয়েছে বেশি দামে। সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় মাছের পরিমাণ কম হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি ট্রলার মালিকদের।সাগর থেকে ফেরা জেলে রফিকুল আমানি বলেন, সাগরে যাওয়ার পর থেকে কয়েকবার ঝড়ের কবলে পড়ে জাল ফেলতে পারিনি। তারপরও যে কয়বার ফেলেছি তেমন মাছ পাইনি। আবার কাল থেকে ২২ দিনের অবরোধ।
মাছ ক্রেতা জহিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘মাইকিংয়ের মাধ্যমে শুনেছি কাল থেকে ইলিশ বিক্রয় বন্ধ। তাই ভোরেই আসছি মাছ কিনতে। ভেবেছিলাম দাম কম হবে। কিন্তু খুচরা বাজারের থেকে দাম অনেক বেশি।’এক পাইকারি ক্রেতা বলেন, ‘সপ্তাহে দুই-তিন দিন এখান থেকে মাছ কিনে কচুয়া, বাধাল, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন স্থানে খুচরা বিক্রি করি। আজকে যে দামে মাছ কিনলাম তাতে খুচরা খরিদদারদের কাছে বেচতে খুব কষ্ট হবে।’‘কেবি বাজারে আগেও বেশ কয়েকবার মাছ কিনেছি। তখন দেখতাম পোন হিসেবে মাছ বিক্রি হতো, আজকে হচ্ছে কেজি হিসেবে। তাও দাম অনেক বেশি। ৬ কেজি মাছ কিনেছি ৫ হাজার টাকায়।’কেবি বাজার মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি বলেন, শেষ সময়ে সবাই মাছ কিনতে চাচ্ছে, তাই দামও বেশি। জেলে ও ব্যবসায়ীরাও চাচ্ছে তাদের মাছ বিক্রি করে চলে যেতে। তবে কেউ কেউ আরও বেশি দামে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে। তবে রাতের আগেই সব বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত সমুদ্র ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। অবরোধ কার্যকর করতে দিন-রাত সব সময় আমাদের টহল জোরদার থাকবে। এ সময়ে জেলেদের সরকারি সহায়তাও দেয়া হবে।