বিশেষ এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।আদালতের নির্দেশনার অনুসারে, ইভ্যালির ওপর একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী পর্ষদ। গেল ৩১ আগস্ট এটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি ইভ্যালি পর্ষদের কাছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি জমা দেয়। এ সময় বলা হয়, একটি ভালো প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য পর্যাপ্ত তথ্যাদি পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এ বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে কি না, তা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদন্তের বিষয়।
ইভ্যালির বাণিজ্যিক কার্যক্রম কোনোভাবেই টেকসই ছিল না উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে পরিচালিত হয়নি। সার্বিকভাবে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল ছিল। এটি শতভাগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়েছে। এটিতে কোনো করপোরেট কাঠামো ছিল না।
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা, তথ্য সংরক্ষণ, লেনদেন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে নিরীক্ষা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি ব্যাংক ও এমএফএস (মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করেছে। সে হিসাবেও গরমিল পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে লেনদেনের সঙ্গে কাগজ পত্রেও অসংগতি রয়েছে। এমনকি সরকারের শুল্ক-কর দেয়ার সঙ্গে হিসাব নিকাশের মধ্যেও গরমিল ছিল।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে শুল্ক-কর, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন, মামলা-মোকদ্দমার তথ্য, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়। যা তারা দেননি।
ইভ্যালিকে পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার (সিএফও) পদ খালি ছিল। কর্মকর্তা ও কর্মীরা উচ্চ বেতনে চাকরি করলেও তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ দেখা যায়নি।
ইভ্যালি তাদের ব্যবসা পরিচালনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চেয়েছিল, কিন্তু তারা সেটি পায়নি বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবসায়িক কৌশল খুবই দুর্বল উল্লেখ করে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদনে লিখেছে, রাসেল ও শামীমা ইভ্যালির ব্যবসা সম্প্রসারণ করলেও তাদের ততটা মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল না। গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ইভ্যালি ব্যবসা করেছে। স্বল্পসংখ্যক গ্রাহককে পণ্য দিলেও বিপুলসংখ্যককে তা দিতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে রাসেল কারাগারে রয়েছে। তবে গত এপ্রিল থেকে তার স্ত্রী শামীমা জামিনে রয়েছেন।
এর আগে রাসেল কারাগারে পাঠানোর পর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য চার সদস্যের একটি পর্ষদ গঠন করা হয়। সে পর্ষদই এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন করিয়েছে। সেটি ২২ সেপ্টেম্বর জমা দেয়া হয়।