পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে গ্রহণ করা ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছে।চট্টগ্রামের শহর ও উপকূলীয় বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকাসমূহ উন্নয়নের মাধ্যমে আবাসন, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করতেই ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে গ্রহণ করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজ থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। ফলে শহর ও উপকূলীয় বাঁধের মধ্যস্থিত এলাকাসমূহ উন্নয়নের মাধ্যমে আবাসন, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় কিছুটা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২ হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক দফা সংশোধন করতে হয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শতভাগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করলেও তা পারেনি। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটির শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে তিন দফা সংশোধনী আনার কারণ সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য সড়কটিতে বাস-বে, প্যাসেঞ্জার শেড, ফুট ওভারব্রিজ, রিজিড পেভমেন্ট, নিউজার্সি ব্যারিয়ার, সংযোগ সড়ক, সেতু, রেগুলেটরের সম্মুখে স্লোপ প্রটেকশন, রিটেইনিং ওয়াল, ওয়াকওয়ে, প্রি-ফেব্রিকেটেড ভার্টিক্যাল ড্রেন, এলইডি স্ট্রিট লাইট ইত্যাদি অংশ নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তি করা, সড়ক বাঁধের স্লোপ প্রটেকশন, জলাধারের মাটি খনন, পাম্প হাউস, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও ভূমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি অংশের পরিমাণ ও ব্যয় কমানো, রেগুলেটর ও ড্রেনের স্ট্রাকচারাল কাজ, এমব্যাংকমেন্ট ফিলিং ও অন্যান্য মাটির কাজ অংশে পরিমাণ কমলেও ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বাড়ানোই মূল কারণ।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপিতে ৩৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সির হাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যাতায়াত সুবিধা বাড়িয়ে চট্টগ্রাম শহরের আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে যানজট নিরসন সম্ভব হবে। শহর ও উপকূলীয় বাঁধের মধ্যস্থিত এলাকাসমূহ উন্নয়নের মাধ্যমে আবাসন, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের জন্য ৪৭ দশমিক ৫৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ১ দশমিক ৯৩ লাখ বর্গমিটার রোড পেভমেন্ট ও ১ হাজার ৪৭০ বর্গমিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। ৬টি বাস-বে, ৩টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ৯ হাজার ১৬৫ মিটার নিউজার্সি ব্যারিয়ার ও ৩৫৩ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২৫০ বর্গমিটার সেতু ২০ হাজার ৯৭৫ দশমিক ৮০ বর্গমিটার স্ট্রাকচারাল ও ৬৮ হাজার ৭৯৪ মিটার পাইলিং কাজ, ৩৭ হাজার ৮৭০ মিটার ইন্টারসেপ্টার ড্রেন, সসার প্রি-কাস্ট ড্রেন, স্লোপ ড্রেন ও ৪১ দশমিক ৫২ লাখ মিটার প্রি-ফেব্রিকেটেড ভার্টিক্যাল ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও ১ দশমিক ৭ লাখ বর্গমিটার স্লোপ প্রোটেকশন, ৫ হাজার ৭৭৬ মিটার রিটেইনিং ওয়াল ও ১৫ হাজার ৫৭ বর্গমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর বাইরেও এমব্যাংকমেন্ট ফিলিং ও মাটির কাজ করা হবে। থাকবে পাম্প হাউজ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, এলইডি স্ট্রিট লাইট ও পানির পাম্প।
একনেকে উপস্থাপনের পক্ষে মতামত দিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যমাত্রা সংযোগ সড়ক, ওভারপাস ও বাইপাস সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা, সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। শহরের অভ্যন্তরে যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে। এমন অবস্থায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকের বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। অক্টোবর ও ডিসেম্বরে খুলে দেওয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নর্মিত বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের দুটি টিউব। এর ফলে বদলে যাবে পুরো চট্টগ্রাম। পাশাপাশি চাপও পড়বে এই শহরে। তাই চাম সামাল দিতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠবে আবাসন, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প। যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে।