সরকার অগ্রিম ক্রয়াদেশ দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস), যুক্তরাষ্ট্রের জেঅ্যান্ডডি ও এমারজেন্ট বায়োটেকে কর্মরত গবেষক এবং বাংলাদেশের এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেডের সহযোগিতায় ‘ডিউ-বিডি-ভ্যাক’ নামের এ টিকা তৈরি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএআরএসের গবেষক ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোজামমেল হক জানান, প্রাণীর শরীরে পরিচালিত পরীক্ষায় এই টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করতে সক্ষম বলে প্রমাণ মিলেছে। সাশ্রয়ী দামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তত্ত্বাবধানে দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করতে উদ্যোগী হয়েছেন একদল গবেষক। বিদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত এক ডোজবিশিষ্ট এ টিকার দাম পড়বে ৫০০ টাকার কাছাকাছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে দ্রুতই এই টিকা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট বিজ্ঞানীরা। তবে মন্ত্রণালয় গত তিন মাসেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তিনি বলেন, টিকা উৎপাদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি করা হয়েছে। ২০২১ সালে গবেষণা শুরু হয়।
চলতি বছরে ইঁদুরের শরীরে এই গবেষণা চালানো হয়। এটা ইঁদুরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত সময়ে এই টিকা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব। এ টিকা সংরক্ষণ সহজ। এখন টিকাটি বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে মানবদেহে প্রয়োগ করতে হবে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, টিকা উৎপাদনে এখনও পেটেন্ট করতে অপারগ ৪০টি দেশ ২০৩২ সাল পর্যন্ত উৎপাদনে যাওয়া যে কোনো টিকার প্রযুক্তি নিয়ে উৎপাদন করতে পারবে। এরই মধ্যে আফ্রিকাসহ ১০০টির বেশি দেশ এভাবে টিকা উৎপাদনে কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দুই কোটি টিকা কেনার প্রাক-কার্যাদেশ দেওয়ার অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চলতি বছরের জুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। শর্ত পূরণসাপেক্ষে সরকারি ক্রয় আইন ও প্রবিধি মেনে এবং জরুরি অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে। তবে তিন মাস অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সমকালকে বলেন, এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে এটি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংশ্নিষ্ট গবেষকরা জানান, এএফসি এগ্রো বায়োটেক শিগগির মানবদেহে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করবে। টিকা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে এএফসি এগ্রো বায়োটেকও প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছে।
এএফসি এগ্রো বায়োটেকের নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ডা. সারোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘দেশে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ কমে গেলেও টিকা উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা অর্জন করা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি। অর্থনৈতিক এই মন্দার সময়ে সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা আপৎকালীন স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব।’
তিনি জানান, এর আগে দেশীয় প্রযুক্তিতে পুরোপুরি আমাদের দেশেই করোনার টেস্টিং কিট উদ্ভাবন এবং উৎপাদন করে সরকারকে সরবরাহ করেছেন তাঁরা। টিকার ব্যাপারেও সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।
এদিকে সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রথম ধাপে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের (ট্রায়াল) অনুমতি পেয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনা টিকা বঙ্গভ্যাক্স।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা মহামারির শুরুর পর অনেক দেশই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে টিকা উৎপাদনে উৎসাহিত করার জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। বিশ্বের ছয়টি কোম্পানির টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় নিজ নিজ দেশের সরকার থেকে টিকা কেনার প্রাক-কার্যাদেশ পায়।
টিকা উৎপাদন গবেষণা পর্যায়ে থাকা অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার কয়েকটি কোম্পানিকে ৮০ কোটি ডলারের প্রাক-কার্যাদেশ দেয়। যুক্তরাজ্য সরকারও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগেই ৩৮ কোটি ডলারের টিকা কেনার প্রাক-কার্যাদেশ দিয়েছিল। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কভিড টিকা মানবদেহে প্রয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই বাংলাদেশ সরকারও তা কেনার চুক্তি করেছিল।