এডিমন গিন্টিং বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা সংক্রান্ত কর্মসূচিতে এডিবির এ ঋণের অর্থ ব্যববহার করা হবে। হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো উন্নয়নে জরুরি একটি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শে
বাংলাদেশের সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই চ্যালেঞ্জের। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, সেগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। সরকার বিভিন্ন খাতে ব্যয় সাশ্রয় করছে। তিনি জানান, উন্নয়ন প্রকল্প তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে খরচে অগ্রাধিকার নেওয়ার কৌশলের প্রশংসা করেছে এডিবি। বাজেট সহায়তা পেতে কোনো সমস্যা নেই। যে কোনো সময়েই তা পাওয়া সম্ভব।
এডিবি কী ধরনের শর্তে এ বাজেট সহায়তা দিচ্ছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আলোচনা হচ্ছে। শর্ত তো কিছু থাকবেই। যেমন অর্থ ধার নিলে কবে পরিশোধ করতে হবে, সেটিও তো একটি শর্ত। তবে এ বিষয়ে আর কিছু জানাননি তিনি।
এডিবির সহায়তায় হাওর এলাকায় প্রকল্প নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি হাওর এলাকায়। তাই বলে আমি যে প্রকল্প টেনে এনেছি- সেটি ভাবার কারণ নেই। এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এ রকম প্রকল্প চান।’ মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে বন্যায় বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সংশ্নিষ্ট এলাকায় পুনর্বাসন কাজে এডিবি পাশে থাকবে।
জানা গেছে, এডিবির ঋণে সুদের হার হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ৩ বছরের রেয়াতকালসহ ১৫ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিন চ্যানের ঢাকা সফরের সময় বাজেট সহায়তা বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। তার আগে সরকারের পক্ষ থেকে এই ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়। এর পর এডিবির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রেল ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের পরামর্শ : সরকারের সঙ্গে এডিবির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। বৈঠকে এডিবির সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং ইআরডি সচিব শরিফা খান।
বৈঠকে এডিবির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক ক্যানেচি ইউকোয়ামা করোনার ক্ষতি থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বেড়ে চলার পরিস্থিতিতে এ পুনরুদ্ধার সহজ ছিল না। জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকৌশলেরও প্রশংসা করেন তিনি। তবে বাংলাদেশের রেলওয়ে ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে উন্নতি আনতে এ সংক্রান্ত সংস্কার প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
বৈঠকে এডিবির বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় ৩৪টি নির্বাচিত প্রকল্পের ৮৯টি ইস্যু এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে ১২০ কার্যক্রম নির্ধারণে এক মত হয় দুই পক্ষ। করোনার প্রকোপ শুরুর পর এ পর্যন্ত এডিবির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরে পাওয়া গেছে ৫০ কোটি ডলার।
ষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।