টানা দরপতনে শেয়ারবাজার সূচক ৬০০০ পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নামতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত ২৮ জুলাই ফের ফ্লোর প্রাইস আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়, যা কার্যকর হয় ৩১ জুলাই। ওই দিন অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধি দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হওয়ায় ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা শেয়ার সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৭৬টিতে। পরের দুই দিনও দরবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। এ কারণে গত ২ আগস্ট ফ্লোর প্রাইসে থাকা শেয়ার সংখ্যা মাত্র ৩৪টিতে নেমে আসে।দ্বিতীয় দফায় সর্বনিম্ন বাজারমূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর রেকর্ড সংখ্যক শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে। গতকাল রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার সংখ্যা ১২৫টিতে উন্নীত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও এ সংখ্যা ছিল ১১১টি। তাছাড়া ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা শেয়ারগুলোর মধ্যে ১৩২টির দর মাত্র ১ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৮৬টি। অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার এখন ৩২ শতাংশের বেশি।এর পর ক্রমে দরপতন বাড়লে ১১ আগস্ট এ সংখ্যা ১০৯টিতে উন্নীত হয়। গত এক মাস ধরে গুটিকয় শেয়ারে ভর করে সূচক বাড়লেও ক্রমে দর হারানো শেয়ার সংখ্যা বাড়ছিল। তবে ৩১ আগস্ট ফ্লোরে পড়া থাকা শেয়ার ফের ৪৮টিতে নেমে আসে। গত দুই সপ্তাহ সিংহভাগ শেয়ার দর হারালে ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার সংখ্যাও ক্রমে বেড়েছে।
গতকাল ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে ৩৭৩ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৫টির দর বেড়েছে। বিপরীতে ২১৯টি শেয়ার দর হারিয়েছে। দর অপরিবর্তিত ছিল ১০৯টির। রোববার নতুন করে ১৪ শেয়ার ফ্লোরে নেমেছে। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ প্রথম দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়।
গতকাল লেনদেন শেষে তালিকাভুক্ত ৩৬ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টিই বাজারদর ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে। বাকি তিন ফান্ডের বাজারদর ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় মাত্র ১ থেকে দেড় শতাংশ বেড়ে কেনাবেচা হয়েছে। এগুলো হলো- এলআর গ্লোবাল প্রথম, এনসিসি ব্যাংক প্রথম এবং ভ্যানগার্ড বিডি প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড।
এর বাইরে বীমা খাতের ১৭টি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হচ্ছে। এর অন্যতম হলো পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ার মাত্র ৩০ টাকা থেকে ১১ মাসে প্রায় সাত গুণ দর বেড়ে গত বছরের ১৫ জুন ২১৫ টাকা ছাড়ায়। এর সোয়া বছর পর এখন শেয়ারটির দর ফ্লোর প্রাইস সাড়ে ৭১ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
এ ছাড়া বস্ত্র খাতের ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ২৬টি, ব্যাংক খাতের ৩৩ শেয়ারের মধ্যে নয়টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ শেয়ারের মধ্যে ছয়টি, প্রকৌশল খাতের ৪২টির মধ্যে আটটি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২১ শেয়ারের মধ্যে আটটি ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হচ্ছে।
ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হওয়া উল্লেখযোগ্য শেয়ার হলো- ব্র্যাক, এনআরবিসি ও সাউথইস্ট, আর্থিক খাতের বিডি ফাইন্যান্স, বীমা খাতের ন্যাশনাল লাইফ, নিটল, নর্দার্ন, প্যারামাউন্ট, প্রভাতী ও স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। বিদ্যুৎ খাতে রয়েছে খুলনা পাওয়ার। প্রকৌশল খাতে রয়েছে এটলাস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন কেবলস, ন্যাশনাল টিউবস এবং ওয়ালটন। এ ছাড়া রয়েছে বস্ত্র খাতে সাফকো স্পিনিং এবং স্টাইল ক্রাফট, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের বিএটিবিসি, এমারেল্ড অয়েল, ফু-ওয়াং ফুড, সিমেন্ট খাতের ক্রাউন সিমেন্ট, চামড়াজাত পণ্য খাতের ফরচুন সুজ ও টেলিযোগাযোগ খাতের রবি।
এমন চিত্রের বিপরীতে গতকালও ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ শতাংশ দর বেড়ে কেনাবেচা হয়েছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ার। গতকাল শেয়ারপ্রতি ১১ টাকার বেশি দর হারানোর পরও ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় সর্বোচ্চ ২৮০ শতাংশ দর বেড়ে কেনাবেচা হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। ৫০ থেকে ৭৮ শতাংশ দর বেড়ে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলো হলো- কহিনূর কেমিক্যাল, মেট্রো স্পিনিং, সি পার্ল, ইস্টার্ন হাউজিং এবং ওরিয়ন ফার্মা।
শুধু বেক্সিমকো লিমিটেডের ৭ টাকা ৩০ পয়সা দরবৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যসূচকে ১৭ পয়েন্ট এবং বেক্সিমকো ফার্মার ৬ টাকা ১০ পয়সা দরবৃদ্ধি পেয়ে সোয়া ৭ পয়েন্ট যোগ করার পরও গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স পৌনে ২২ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৫৩৮ পয়েন্টে নেমেছে।