প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভারত সফরে দেশটির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের ব্যবসায়ীদের সিআইআই আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। এ বৈঠকের আগে ভারতের অন্যতম ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।বাংলাদেশে ভারতের বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে সে অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়ছে না। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত মার্চ পর্যন্ত ভারতের বিনিয়োগ স্থিতি ৭৬ কোটি ডলার। গত বছর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি ডলার। অথচ গত বছর ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে।এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ সুদৃঢ় করার জন্য ‘কম্প্র্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা সেপা’ চুক্তির আলোচনা শিগগির শুরু হবে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। এ চুক্তি হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে এবং বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের মিরসরাই, মোংলা ও কুষ্টিয়াতে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশভিত্তিক এফডিআইর হিসাবে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের অবস্থান দশম। গত মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে ব্যাংকিং খাতে ২০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এরপরই ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। আর টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ এসেছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম, খাদ্য, ট্রেডিং, কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস, নির্মাণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি ও মৎস্য এবং বীমা খাতে ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
ভারতীয় কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) লিমিটেডের মালিকানায় বাগেরহাটের রামপালে স্থাপিত মৈত্রী থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, বীমা কোম্পানি এলআইসি, আদানি গ্রুপের আংশিক মালিকানার বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানি, এফএমসিজি খাতে ম্যারিকোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি, পণ্য পরিবহন, ধাতব শিল্প, মোটরসাইকেল সংযোজন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে দেশটির ব্যবসায়ীদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্টার্টআপ বা আইটি খাতে কিছু বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু ভারী শিল্পে বিনিয়োগ তেমন দেখা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যবসার বাড়তি খরচ ও কার্যক্রমের জটিলতা। দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা এবং ব্যবসার খরচ কমানোর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন না হলে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন আকৃষ্ট হবে না।বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, শুধু রাজনৈতিক সুসম্পর্ক দিয়ে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে না। সার্বিকভাবে বাণিজ্য সহজ করা, খরচ কমানো ও দ্রুত কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্দরে পণ্য খালাস দ্রুত করা জরুরি। কাস্টমসসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে বড় বাজার রয়েছে। ফলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা প্রবল। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অগ্রগতি নেই। এ অবস্থা রেখে বিনিয়োগ করলে তাতে সাড়া পাওয়া কঠিন।