বুধবার কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দেশে এসব পণ্য উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ইউনিলিভার, স্কয়ার, এসিআই, কল্লোল গ্রুপসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান এ ঘোষণা দেন।সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্টসহ এধরনের পণ্যের দাম সম্প্রতি অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এগুলোর উৎপাদন ব্যয় যাচাই ও খুচরা মূল্যের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।একই সঙ্গে ‘তথ্য যাচাইয়ে’ এসব পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির কারখানায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তদারকি চালানোর কথাও বলেন তিনি।
বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্টের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়া, টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠা এবং পরিবহন ব্যয়কে কারণ হিসেবে দাবি করেছেন উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
ইউনিলিভারের প্রতিনিধি জাহিদ মালিথার দাবি, গত দুই বছরে পণ্যের দাম হয়ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এসব পণ্যের ৮০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এর একটা প্রভাব পড়েছে। যেমন ওয়াশিং পাউডারের দাম দুই বছরে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্ত এর সার্বিক খরচ বেড়েছে ৯৬ শতাংশ। প্রধান কাঁচামাল সালফিউরিক এসিডের দাম ৮৩ থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা হয়েছে।
“এভাবে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে বাধ্য করেছে। আমরা ক্রেতা ধরে রাখার জন্য মুনাফা করার পরিমাণ অনেক কমিয়ে এনেছি। পাশাপাশি বাজারজাত করতে যে একটা খরচ সেখানেও কাটছাঁট করেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে গেলে আমরা নিশ্চয় দাম আবার কমিয়ে আনব।”স্কয়ারের হেড অব অপারেশন মালিক এম সাঈদ বলেন, কিছুদিন পর পর দাম বাড়ানো নিয়ে আমরাও অস্বস্তির মধ্যে আছি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে দাম বাড়াচ্ছি। কারণ ক্রেতারা কনজাম্পশন কমিয়ে দিচ্ছে দাম বাড়ার কারণে।
“আমরা কত টাকায় কি কাঁচামাল আনি এগুলো খুবই খোলামেলা বিষয়। আপানার চাইলে এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন।“
সবার বক্তব্য শোনার পর বৈঠকে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন- আপনারা অযৌক্তিকভাবে ভোক্তার পকেট কাটছেন। কিন্তু আলোচনায় যেটা দেখা গেল আপানাদের পক্ষ থেকে শক্ত যুক্তি আছে। তবে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার।এটি কোম্পানিগুলোর ‘সুরক্ষার’ জন্যই দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষ মনে করছে ইউনিলিভার বা স্কয়ার বা এসিআই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা যে যৌক্তিক সেটা মানুষের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার, সেটা জনগণের কাছে পৌঁছানো দরকার।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিগুলোর কারখানায় তদারকি চালানোর প্রস্তাব দিয়ে মহাপরিচালক বলেন, আমি সেজন্য আপনাদের সমর্থন চাচ্ছি। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন থেকে প্রতিনিধি, আইসিএমএবি থেকে প্রতিনিধি এবং ভোক্তা অধিকারের একজন কর্মকর্তা আপনাদের কারখানাগুলো পরিদর্শন করবেন। আমরা একটু ক্রস চেক করবো। পণ্যের উৎপাদন খরচ ও খুচরা মূল্যের যৌক্তিকতা দেখবো।এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক গোপনীয়তা রক্ষা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে লিখিতভাবে জানাব যে, এই জায়গায় কাজ করার প্রয়োজন আছে।”
ক্যাবের প্রতিনিধি ও ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের যখন মূল্যবৃদ্ধি ঘটে তখন ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে। যেই পণ্যের মূল্য বাড়ালে মার্কেটে আপনার শেয়ার কমে যেতে পারে, আপনারা সচেতনভাবে সেখানে কিন্তু মূল্য বাড়াচ্ছেন না।